“আমরা” বলার বিষয়টি এবং ‘Royal We’ এর ব্যাখ্যা:
এই ব্যাপারটি হতে আমাদের অনেকেরই একটা লজিক্যাল প্রশ্ন জাগে—যে, আল্লাহ একজন অথচ তিনি কুরআনে নিজেকে অনেক জায়গায় "আমরা" বলে উল্লেখ করেছেন। এর পেছনে একটা গুরুত্বপূর্ণ ভাষাগত ও সাহিত্যিক কারণ রয়েছে।
আল্লাহ পবিত্র কুরআন শরীফে তার একত্ববাদের কথা ঘোষণা করে বলেন:
“বলুন, তিনিই আল্লাহ, একমাত্র।”
— সুরা ইখলাস (১১২:১)
অর্থাৎ, আল্লাহ স্বয়ং বলেছেন, তিনি একজন। কিন্তু অন্যদিকে দেখা যায়, তিনি কুরআনে কোথাও কোথাও "আমরা" বলেও কথা বলেছেন, যেমন:
“আমরা আপনার নিকট মূসা ও ফিরআউনের ঘটনা যথাযথভাবে বিবৃত করছি, ঈমানদার জাতির জন্য।”
— সুরা কাসাস (২৮:৩)
প্রশ্ন: তাহলে “আমরা” মানে কি বহুজন? এটা কি একাধিক সত্তার ইঙ্গিত?
উত্তর: না, এটি বহুবচনের ইঙ্গিত দেয় না। এটি আরবি সাহিত্যের একটি রীতি, যাকে বলা হয় “Royal We” বা “রাজকীয় আমরা”। এটি সম্মান প্রদর্শনের একটি শৈল্পিক রূপ।
আরবি ভাষায় সর্বনাম ব্যবহারের রীতি:
আনা (أنا) = আমি (I) — একবচন
হুয়া (هو) = তিনি/সে (He) — একবচন
নাহনু (نحن) = আমরা (We) — বহুবচন (কিন্তু কখনও সম্মানিত একবচনের ক্ষেত্রেও ব্যবহৃত হয়)
আরবি সাহিত্যের নিয়ম অনুযায়ী:
আরবি সাহিত্যে একজন সম্মানিত ব্যক্তির কথা বলার সময় সম্মানসূচক বহুবচন ব্যবহার করা হয়। যেমন— বাদশাহ, রাষ্ট্রপ্রধান, বা মহান ব্যক্তিত্বের জন্য ‘আমরা’ বলা হয়, যদিও তিনি একাই হন। এটি তাদের মর্যাদা বোঝাতে ব্যবহৃত হয়।
উদাহরণস্বরূপ:
আরবিতে কাউকে সালাম জানাতে “আলাইকা” না বলে বলা হয় “আলাইকুম”, যার অর্থ “আপনাদের উপর শান্তি বর্ষিত হোক”, যদিও ব্যক্তি একজনই। কারণ এটি সম্মানবাচক বহুবচন।
ইসলামী পণ্ডিতদের দৃষ্টিভঙ্গি:
ইমামুন নাহব রযীউদ্দীন মুহাম্মদ ইবনুল হাসান (মৃত্যু: 666 হি.) তার গ্রন্থে বলেন:
“সম্মানিত একবচনের জন্য বহুবচনের ব্যবহার হয়—যেমন বলা হয় ‘নাফআলু’ বা ‘নাফআলনা’।”
সমসাময়িক দৃষ্টান্ত:
ইংরেজ রাণীও যখন আইন জারি করেন, তখন বলেন:
"We decree..."
(আমরা এই আইন জারি করছি...)
তখন ‘We’ মানে একাধিক ব্যক্তি নয়, বরং এটি রাজকীয় মর্যাদার বহিঃপ্রকাশ মাত্র। একে Royal We বলা হয়।