টাইপ ১ এবং টাইপ ২ ডায়াবেটিস দুটি প্রধান ধরনের ডায়াবেটিস, যা শরীরের গ্লুকোজ (শর্করা) নিয়ন্ত্রণে সমস্যা সৃষ্টি করে। এগুলোর মধ্যে প্রধান পার্থক্য হলো, ইনসুলিন উৎপাদন এবং কার্যকারিতার ক্ষেত্রে। নিচে টাইপ ১ এবং টাইপ ২ ডায়াবেটিসের মধ্যে পার্থক্য এবং প্রতিটি ধরণের বৈশিষ্ট্য বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হলো:
টাইপ ১ ডায়াবেটিস (Type 1 Diabetes)
টাইপ ১ ডায়াবেটিস একটি অটোইমিউন রোগ, যেখানে শরীরের প্রতিরোধ ব্যবস্থা (immune system) অগ্ন্যাশয়ের (Pancreas) ইনসুলিন উৎপাদনকারী কোষগুলিকে ধ্বংস করে ফেলে। এর ফলে শরীর পর্যাপ্ত পরিমাণে ইনসুলিন তৈরি করতে পারে না, যা রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সহায়ক।
বিশেষ বৈশিষ্ট্য:
-
শরীরে ইনসুলিনের অভাব: টাইপ ১ ডায়াবেটিসে শরীর ইনসুলিন তৈরি করতে পারে না, তাই রোগীকে ইনসুলিন ইনজেকশনের মাধ্যমে ইনসুলিন সরবরাহ করতে হয়।
-
আক্রান্ত হওয়ার সময়: সাধারণত শিশুদের বা তরুণদের মধ্যে এই রোগ দেখা যায়, তবে এটি যে কোনও বয়সে হতে পারে।
-
কারণ: এটি একটি অটোইমিউন রোগ, যেখানে শরীরের প্রতিরোধ ব্যবস্থা নিজেরই ইনসুলিন উৎপাদনকারী কোষগুলোকে ধ্বংস করে দেয়।
-
উপসর্গ: অতিরিক্ত তেষ্টা, বেশি প্রস্রাব হওয়া, দুর্বলতা, ওজন হ্রাস, এবং অস্বাভাবিক ক্লান্তি।
-
চিকিৎসা: ইনসুলিন থেরাপি প্রধান চিকিৎসা। রোগীকে নিয়মিত ইনসুলিন ইনজেকশন নিতে হয় বা ইনসুলিন পাম্প ব্যবহার করতে হয়।
টাইপ ২ ডায়াবেটিস (Type 2 Diabetes)
টাইপ ২ ডায়াবেটিস হলো এক ধরনের রক্তের শর্করার সমস্যা যেখানে শরীর ইনসুলিন তৈরি করতে পারে, তবে শরীরের কোষগুলির প্রতি ইনসুলিনের প্রতিরোধ ক্ষমতা (insulin resistance) বৃদ্ধি পায়। এর ফলে শরীর যথাযথভাবে ইনসুলিন ব্যবহার করতে পারে না, এবং রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ বেড়ে যায়।
বিশেষ বৈশিষ্ট্য:
-
ইনসুলিন প্রতিরোধ: টাইপ ২ ডায়াবেটিসে শরীর ইনসুলিন তৈরি করে, তবে কোষগুলো ইনসুলিনের প্রতি প্রতিরোধ গড়ে তোলে, ফলে গ্লুকোজকে শক্তিতে রূপান্তরিত করা কঠিন হয়ে পড়ে।
-
আক্রান্ত হওয়ার সময়: সাধারণত প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে টাইপ ২ ডায়াবেটিস বেশি দেখা যায়, তবে বর্তমানে শিশুরাও এই রোগে আক্রান্ত হচ্ছে।
-
কারণ: স্থূলতা (obesity), পরিবারে ডায়াবেটিসের ইতিহাস, শারীরিক inactivity, এবং খারাপ খাদ্যাভ্যাস টাইপ ২ ডায়াবেটিসের প্রধান কারণ।
-
উপসর্গ: অতিরিক্ত তেষ্টা, বেশি প্রস্রাব হওয়া, দুর্বলতা, ধীরতম পায়ে ক্ষত হওয়া, দৃষ্টি সমস্যা, এবং ইনফেকশন।
-
চিকিৎসা: টাইপ ২ ডায়াবেটিসের চিকিৎসায় মূলত জীবনযাত্রার পরিবর্তন (যেমন ওজন কমানো, স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস, এবং নিয়মিত ব্যায়াম) এবং কিছু ক্ষেত্রে ওষুধ (অথবা ইনসুলিন) ব্যবহৃত হয়।
টাইপ ১ ডায়াবেটিস এবং টাইপ ২ ডায়াবেটিস দুটি পৃথক ধরনের রোগ, তবে উভয়েরই রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সমস্যা সৃষ্টি করে। টাইপ ১ ডায়াবেটিসে ইনসুলিন সম্পূর্ণরূপে বন্ধ হয়ে যায়, তাই রোগীকে নিয়মিত ইনসুলিন ইনজেকশন নিতে হয়। অন্যদিকে, টাইপ ২ ডায়াবেটিসে শরীর ইনসুলিন ব্যবহার করতে পারে না, এবং এটি জীবনযাত্রার পরিবর্তন, ডায়েট এবং কিছু ক্ষেত্রে ইনসুলিন বা অন্যান্য ওষুধের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করা যায়।